অব্যবস্থাপনায় শুরু রেল সেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহ

86

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হওয়া সেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহ প্রথম দিনেই অব্যবস্থাপনায় ভরপুর ছিল। গতকাল সকাল ১১টায় সেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় ১২টা ২০ মিনিটে। পরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক এসে মহানগর এক্সপ্রেসের একটি কোচে উঠে যাত্রীদের চকলেট ও ফুল দিয়ে স্বাগত জানান এবং বেলুন উড়িয়ে সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন।
সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন শেষেই স্টেশন ম্যানেজারের কক্ষের পাশে প্লাটফর্মে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. বোরহান উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক সরদার সাহাদাত আলী, প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান, প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা অসীম কুমার তালুকদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন।
সভায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেবা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। আমরা এ সপ্তাহ পালনে রেল সেবা ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়েছি। ইতোমধ্যে সাতটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এরা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে সমস্যা চিহ্নিত করবে। কোথাও সেবায় ঘাটতি আছে কিনা কিংবা নতুন সেবা দেয়ার বিষয়গুলো টাস্কফোর্স দেখবে। রেল নিরাপত্তায় অপারেটিং দক্ষতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করবে তারা। এছাড়া লাইন ক্লিয়ার, যাত্রীর সেবার মান উন্নয়ন, খাবারের মান, লেবেল ক্রসিং নিরাপদ অপারেটর, কোচ, রেল লাইন, সিগন্যাল, রিলিফ ট্রেন ও ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে কাজ করবে টাস্কফোর্স।
রেল সেবার কথা তুলে ধরে জিএম বলেন, ‘স্টেশনের এপ্রোচ রোড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, টিকিট মূল্য দেখভাল করা, টয়লেট পরিষ্কার রাখা, যাত্রী অভিযোগের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা, সঠিক সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ক্যাটারিং সার্ভিসের মান যাচাই করতে টাস্কফোর্সকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন রেল অনেকদূর এগিয়েছে। কয়েক বছর পর সবকিছু দৃশ্যমান হবে।’
এদিকে রেল সেবা সপ্তাহ শুরু হলেও প্রথম দিনে রেল স্টেশনে ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। সকাল ১১টায় অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত থাকলেও তা শুরু হয় ১২টা ২০ মিনিটে। ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েক সেট সোফা ও ৪০টির মতো চেয়ার রাখা হয়েছে। আলোচকদের জন্য চেয়ার-টেবিল বসিয়ে মঞ্চ বানানো হলেও লাগানো ছিল না কোনো ব্যানার। এসময় আগেভাগেই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকা রেলওয়ে ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দিনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা জিএমের অপেক্ষায় থাকেন। এরমধ্যে চলমান ছিল রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেয়া চিকিৎসাসেবা। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে জিএম আসার পরেই মঞ্চে লাগানো হয় সেবা সপ্তাহের ব্যানার। পরে জিএম সরাসরি প্লাটফর্মে থাকা মহানগর এক্সপ্রেসের একটি কোচে উঠে যাত্রীদের ফুল ও চকলেট দিয়ে স্বাগত জানান। সেখান থেকে নেমেই বেলুন উড়িয়ে সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন পূর্বাঞ্চল জিএম নাসির উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উদ্বোধনের পরেই শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনা সভা চলাকালে রেলওয়ের ৮-১০ জন কর্মকর্তা, স্টেশন ম্যানেজার, মাস্টারসহ কয়েকজন কর্মচারী উপস্থিত থাকলেও বেশিরভাগ ছিলেন সাংবাদিক। সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না কোনো সেবা গ্রহিতা।
এদিকে সেবা সপ্তাহ চলাকালেই টিকিট পেতে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন কয়েকজন যাত্রী। এরমধ্যে তূর্ণা নিশিতা ট্রেনের টিকিট আনতে যাওয়া স্কুলশিক্ষক প্রমোথ ধর বলেন, ‘শুনেছি আজ (বুধবার) রেল সেবা শুরু হচ্ছে। সেবা নিয়ে চাইলে ব্যতিক্রম কিছু করতে পারতো রেল। কাউন্টারে গিয়ে অনেকেই টিকিট না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। এখনো আচার-আচরণ খারাপ করছে কাউন্টারে থাকা ব্যক্তিরা।’
সকাল ১১টায় সোনার বাংলা ট্রেনের টিকিট নিতে কাউন্টারে দাঁড়ানো রিদুয়ান আহমেদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘সেবা সপ্তাহ শুরু হয়েছে অথচ স্টেশনের বাইরের অবস্থা শোচনীয়। প্রবেশপথেই ইটের স্তূপ রাখা। ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য দুই মাস আগে যে অবস্থা দেখেছি এখনো একই অবস্থা। অন্তত সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারতো। যাত্রীরা আসা-যাওয়ায় স্টেশনের এমন অবস্থা দেখলে রেল নয়, চট্টগ্রাম সম্পর্কেই নেগেটিভ ধারণা করবেন।’
বাইরের ইট-বালির স্তূপ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘সড়কে পাশে সিটি কর্পোরেশন ড্রেন নির্মাণ কাজ করছে। আমি দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছি।’
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইন্সপেক্টর আমান উল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, পুরাতন রেল স্টেশনের সামনে একটি ময়লার স্তূপ ছিল। সেটি আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি।
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি প্ল্যাটফর্মের মাঝখানের খালি জায়গায় ফুল বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী কয়েকমাস পর যাত্রীরা ফুল বাগানের সুগন্ধ পাবেন। তবে বাগানে ছিটানোর জন্য পানি সংকট নিয়ে চিন্তিত আমি।’