অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান আগামী মাসে

71

শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ। ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের সময় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেন।
গত ২৪ ফেব্রæয়ারি কর্ণফুলী ট্যানেলের খনন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ক্রসিং থেকে চট্টগগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কাজ শুরুর কথা বলার পর সড়ক বিভাগ বেদখল জমি উদ্ধারে প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে চলছে তালিকা তৈরির কাজ। সড়কের জমিতে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় পাবেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক একটি দুর্ঘটনা প্রবণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে গর্ত থাকায় এবং চওড়া কম হওয়ার পাশাপাশি অনেকগুলো বাঁক রয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে গড়ে উঠছে দেশের অন্যতম পাওয়ার হাব। কক্সবাজারে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও টেকনাফে নাফ নদীর তীরে হচ্ছে বিশেষ পর্যটন ট্যুরিজম। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কক্সবাজার। তাই কক্সবাজারের সঙ্গে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে সরকার প্রধান শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী ট্যানেলের খনন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পুরনো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করণের ঘোষণা দেন। এরপর এ সড়কের উভয় পাশে দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। এর মধ্যে দোহাজারী সড়ক বিভাগ তাদের এলাকায় এবং কক্সবাজার সড়ক বিভাগ তাদের অংশে দখলদারদের চিহিৃত ও তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৩১ মার্চের পর থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। এর মধ্যে দখলদারদের সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, কর্ণফুলী উপজেলার ওয়াই জংশন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত পুরনো এ মহাসড়কেই চার লেনের কাজ বাস্তবায়ন হবে। সে লক্ষে এ সড়কে দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ১৯৫৫-৬৫ সালে এ সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমি চার লেনে উন্নীত করার জন্য যথেষ্ট। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে সব সংশয় কাটিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প আরো একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সম্ভাব্য প্রাথমিক প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবনা তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল। এডিবির অর্থায়নে ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সুইডিস কনসালটেন্ট নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের জরিপ করে।
কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং থেকে কক্সবাজার রিংরোড পর্যন্ত ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে সড়কটি হবে প্রায় ৮২ ফুট। সড়কের উভয় দিকে ২৪ ফুট চওড়া এবং মধ্যে ডিভাইডার থাকার কথা রয়েছে।
এর পাশে উভয় দিকে ১২ ফুট করে হালকা যানবাহন চলাচলের সুবিধাও থাকছে।
এদিকে শাহ্ আমানত সেতু উদ্বোধনের আট বছর পরে উভয় প্রান্তে সংযোগসড়ক চার ও ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় এবং তা এখনো চলমান রয়েছে। নির্মিত সেতু প্রকল্পের উদ্বৃত্ত (২৭০ কোটি ১১ লাখ) টাকায় সেতুর উভয় প্রান্তে আট কিলোমিটারের মধ্যে নগরী প্রান্তে সেতু থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ছয় লেন ও পটিয়া প্রান্তে মইজ্যারটেক থেকে আনোয়ারা ক্রসিং পর্যন্ত তিন কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। পটিয়ায় নির্মাণ করা হয়েছে বাইপাস।
অন্যদিকে মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের অধীনে ছয় লেনে উন্নীত হতে চলা চারটি সেতু হচ্ছে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টের মাতামুহুরী ব্রিজ, পটিয়া উপজেলার চানখালী খালের ওপরের ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশ বড়গুনি ব্রিজ (মাজার পয়েন্ট) এবং শঙ্খ নদীর ওপরে সাংগু ব্রিজ।
এ প্রসঙ্গে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদ হোসেন বলেন, মহাসড়কের অবৈধ দখলদারদের চিহিৃত করার কাজ শুরু হয়েছে। দোহাজারী সড়ক বিভাগের আওতায় ৬৫ কিলোমিটার এবং অবিশিষ্ট অংশে কাজ করছে কক্সবাজার সড়ক বিভাগ। সারা দেশের মতো মহাসড়ককে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজটি শুরু করা হয়েছে। এখন থেকে দখলদারদের নোটিশ প্রদান করা হবে। এরপর আগামী মাসের শুরু থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।