অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে বাঁশখালীতে

130

বাঁশখালীতে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। প্রতিদিন কোনো না কোনো জায়গায় মারারারির ঘটনায় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সন্ত্রাসীরা কথায় কথায় ছুড়ছে গুলি। এতে অনেকেই অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। পাহাড় ও দুর্গম এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে সন্ত্রাসীরা এমন অপরাধমূলক কর্মকাÐের সাথে জড়িত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার না হলে বাঁশখালীর আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের চাপে প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে নির্বিকার ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত দেড় বছরে বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে সাতজন। গত তিন মাসে সরল ইউনিয়নেই খুনের ঘটনা ঘটেছে দুটি। বেশিরভাগ ঘটনায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার ঘটিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বাহারছড়া, চাম্বল, সরল, গন্ডামারা ও ছনুয়ায় দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক ও জায়গা সম্পত্তির বিরোধের জের ধরেই বিরোধীয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে বেশি। কয়েকটি ডাকাত গ্রুপ কতিপয় রাজনৈতিক নেতার ইন্ধনে মহেশখালী-কুতুবদিয়া থেকে বাঁশখালীতে অস্ত্রগুলো আনে। গত বছর সরল ও পুঁইছড়ির চেকপোস্ট এলাকা থেকে বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার করে বাঁশখালী থানা পুলিশ। এসময় কয়েকজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় টানা কয়েকটি অভিযানে কমপক্ষে ১৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও অস্ত্রগুলো বাঁশখালীতে কারা এনেছিল তা চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মোমেনা আক্তার পূর্বদেশকে বলেন,‘অস্ত্রের মহড়া দেয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আগামী বুধবার আমাদের আইনশৃঙ্খলা সভা। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ এবং অস্ত্র উদ্ধারে থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাম্বলে গত ছয় মাসে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার ঘটেছে। রাজনৈতিক সংঘাত, পাহাড়ের গাছ কাটা ও একে অপরকে ঘায়েল করতে প্রতিনিয়ত অস্ত্রের মহড়া চলছে সেখানে। সম্প্রতি পূর্ব চাম্বল ছড়ারকুল এলাকায় একটি দোকানে আড্ডায় মশগুল ছিলেন বাদশা মিয়ার ছেলে জাকের হোসেন নামে এক সন্ত্রাসী। এসময় শীতের পোশাক জড়ানো ওই সন্ত্রাসীর কোমড়ে একটি ও পেছনের চৌকিতে আর একটি অস্ত্র রাখা ছিল। জাকেরের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া, চান্দগাঁও ও বাঁশখালী থানায় বেশ কয়েকটি ডাকাতির মামলা আছে। এ ঘটনায় তোলপাড় চলাকালেই পূর্ব চাম্বল বাবুল মেম্বারের বাড়িতে হামলা চালাতে গিয়ে রিদুয়ান নামে এক ডাকাতকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। এরপর থেকে ডাকাতরা সাধারণ মানুষের উপর হামলে পড়ছে। গত বুধবার রাতেও এক মুরগি ব্যবসায়ীকে গুলি করার চেষ্টা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে চলে যায়।
গত ১৭ মে বাহারছড়া ইউনিয়নে ইলশায় মদিনা ব্রিকফিল্ডের মালিক আবছার ও চৌধুরী ব্রিকফিল্ডের মালিক ঝুন্টুর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে পুলিশসহ কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন। এই দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার সরল ইউনিয়নে জাফর মেম্বার ও নুর মোহাম্মদ গ্রূপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। নোয়াপাড়ার চৌধুরী বাড়ি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দিনদুপুরে অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি চালানো হয়েছে। সেদিনের ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমেই লাল গেঞ্জি পরিহিত এক ব্যক্তি লম্বা বন্দুক নিয়ে প্রতিপক্ষকে গুলি করার চেষ্টা করেন। এসময় কয়েকজন ব্যক্তি অস্ত্রধারীকে টেনে নিয়ে গেলেও আবারো অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে গুলি করার চেষ্টা করেন। একই সময়ে কোমরে শার্ট বেঁধে অপর এক ব্যক্তিও লম্বা বন্দুক প্রদর্শন করে হাকাবকা করতে থাকেন। এ দুইজনের সাথে আরো দুই ব্যক্তিকে লম্বা কিরিচ নিয়ে হামলার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে অস্ত্রধারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। যদিও পরবর্তীতে আবারো দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। সেদিনের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সরলের ঘটনায় অস্ত্র প্রদর্শন করা ব্যক্তিদের বাড়ি ২নং ওয়ার্ডে। এরা সবাই নুর মোহাম্মদের লোক। ভিডিওতে দেখা যাওয়া অস্ত্র হাতে লাল গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তির নাম শুক্কুর। কোমরে শার্ট বেঁধে হাকাবকা করা ব্যক্তি হোছন আহমদের ছেলে শের আলী। লম্বা কিরিচ প্রদর্শন করা ব্যক্তি মফিজের ছেলে কবির আহমদ।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘কোনো অস্ত্রধারীকে ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধের সাথে যুক্ত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। অস্ত্রধারীদের ভিডিওটি দেখেছি। অস্ত্রধারীকে চিহ্নিতও করেছি। আধিপত্য বজায় রাখতে তারা দীর্ঘদিন ধরে এধরনের গ্রুপিং করে আসছে। এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। যেখানে ঘটনা হয় সে জায়গাগুলো দুর্গম এলাকা। রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় যাতায়াতে একটু সমস্যা হয়। এরপরেও আমরা অভিযান চালাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সফলও হবো।’