অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা চলছেই

118

পটিয়ায় শ্রীমাই খাল থেকে একদিকে ইজারাদার শর্ত অমান্য করে এবং অন্যদিকে একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে বালি উত্তেলন ও মাটি কেটে নিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়েন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় পটিয়া উপজেলা প্রশাসন বালি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এরপর ইজারাদার নিয়ম মেনে বালি তোলা শুরু করলেও অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারীরা প্রশাসনকে তোয়াক্কাই করেন না, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রশাসন এস্কেবেটর নষ্ট করে দেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় অবৈধ দখলদাররা তা মেরামত করে বালি ও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে।
জানা গেছে, ইজারাদার হাইদগাঁও থেকে বাহুলী পর্যন্ত ইজারা নিলেও অবৈধ দখলদাররা ইজারাদরকে বাহুলী এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে পুরো খাল দখল করে বালু ও মাটি লুট করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চুক্তির শর্ত অমান্য করে শ্রীমাই থেকে বালি উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট। বালি উত্তোলনে এস্কেবেটর ব্যবহার আর পানির স্রোতধারা পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনের শ্রীমাই রেলওয়ে সেতু ও শত শত একর কৃষি জমি ঝুঁকিতে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০টি শর্তে শ্রীমাই খালের বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়। উল্লেখযোগ্য শর্তের মধ্যে রয়েছে ইজারা চুক্তির হাতবদল, স্কেচ মানচিত্রের বাইরে এবং পানি চলাচলের স্রোত এলাকার বাইরে বালু সংগ্রহ না করা এবং কৃষি জমির ক্ষতি হয় এমন স্থান থেকে বালি সংগ্রহ নিষিদ্ধ।
কিন্তু বালু ব্যবসায়ীরা শর্ত অমান্য করে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া তারা কেটে নিচ্ছে খাল ও কৃষি জমির মাটি। ফলে বর্ষা শুরু হলে খালের বাঁধ ও অন্যান্য কৃষিজমি এবং রেলওয়ে ও হাইওয়ে সেতু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।
গত রবিবার রাত ৯টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাব্বির রহমান সানি ভাটিখাইন ইউনিয়নের ঠেঁগরপুনি এলাকায় অভিযান চালান। তিনি বালু উত্তোলনের একটি ড্রেজার মেশিন জব্দ ও নষ্ট করেন। তবে বালু উত্তোলনচক্রের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর শ্রীমাই খালে মাটি কাটার সময় একটি এস্কেবেটর ধংস করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শর্ত না মেনে বালির বদলে অবৈধভাবে খাল ও আশপাশের জমি থেকে মাটি কাটার দায়ে
৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় অভিযুক্তকে।
অভিযানের ক’দিন পরই ইজারাদার শর্ত মেনে বালু তোলা শুরু করলেও দখলদররা অবৈধভাবে বালু ও মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বর্ষা মওসুমে পাহাড়ি ঢল ও শ্রীমাই খালের ভাঙনে অসংখ্য বসতঘর ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে।
হাইদগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. জব্বার জানান, বালুমহাল ইজারার নামে দিনরাত খাল থেকে বালু ও মাটি লুট শুরু হয়েছে। সরকারি নীতিমালা না মেনে বালু উত্তোলনে বর্ষা মওসুমে শ্রীমাই খালের দুই পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে। এমন কি ঝুঁকিতে আছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব দেবী চন্দ্রের বসত ভিটেও।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান জানান, সরকারিভাবে বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে বাহুলী, হাইদগাঁওসহ তিনটি পয়েন্ট। এর বাইরে বালি বা খাল থেকে মাটি উত্তোলন বৈধ নয়। গ্রামবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে। সর্বশেষ রবিবার রাতে ভাটিখাইনের ঠেঁগরপুনি এলাকায় ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। যদি আবার বালু তোলা হয়, তাহলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।