অবিশ্বাস্য সব মারণাস্ত্র চীনের অস্ত্রভান্ডারে!

24

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত, ৭০ বছরে জগৎসেরা অবিশ্বাস্য সব মারণাস্ত্রের অধিকারী হয়ে উঠেছে চীন। তাদের ভান্ডারে এখন এমন সব অস্ত্র শোভা পাচ্ছে যা এর আগে আর কোথাও দেখা যায়নি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিশাল মারণাস্ত্রের সমাহারে জলে, স্থলে, আকাশপথে দিন দিন অপ্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে উঠছে এ জাতি। আন্তঃমহাদেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে, ডুবোজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন হাইপারসোনিক অস্ত্র, সর্বাধুনিক ডুবন্ত ড্রোন, বোমারু বিমান, শতাধিক রকমফেরের ট্যাঙ্ক কী নেই চীনা অস্ত্রভান্ডারে। আর এর সবই দেশীয় প্রযুক্তিতে বানানো। ফলে এ জাতির গর্বের শেষ নেই। খবর বাংলানিউজের
বিশ্ববাসীকে অস্ত্রখাতে নিজেদের এই আকাশচুম্বী সাফল্য দেখাতে আগামী সপ্তাহেই মহাসমারোহে এক কুচকাওয়াজের আয়োজন করতে চলেছে চীন। গত শুক্রবার আমেরিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আগামী মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর উদযাপনকে কেন্দ্র করে রাজধানী বেইজিংয়ে এ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার সেনা অংশ নেবে। ৮০ মিনিটের কুচকাওয়াজে প্রদর্শন করা হবে ১৬০টির বেশি আকাশযান ও ৫৮০টি অস্ত্র।
এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি প্যারেড যৌথ কমান্ডের নির্বাহী উপ-পরিচালক ও পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সেন্ট্রাল থিয়েটার কমান্ডের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল তান মিন জানান, কুচকাওয়াজে যেসব অস্ত্র প্রদর্শন করা হবে এর সবই সক্রিয় এবং এর সবগুলোই চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। এরমধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে চীনের উদ্ভাবনী সক্ষমতাই তুলে ধরা হবে।
কুচকাওয়াজে যে সব অস্ত্র প্রদর্শন করা হবে তার কয়েকটি নমুনা প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিএফ-৪১ মিসাইল:
প্যারেড ঘিরে যে অস্ত্রটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি কৌত‚হল তৈরি হয়েছে সেটি হলো পিএলএ’র ক্ষেপণাস্ত্র বিভাগের হাতে থাকা দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিএফ-৪১। বিশেষজ্ঞরা এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী ক্ষেপণাস্ত্র বলে মনে করছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস’র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্প বিভাগ জানায়, ডিএফ-৪১ মিসাইলটি ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম। এরকম ক্ষেপণাস্ত্র আর কোনো দেশের নেই। চীন থেকে ছুঁড়ে মারা হলে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানেই এটি আমেরিকায় আঘাত করতে পারবে। এ ক্ষেপণাস্ত্র একই সঙ্গে ১০টি স্বয়ংসম্পূর্ণ পারমাণবিক টর্পেডো বহনে সক্ষম।
ডুবোজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য জিএল-২ ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসএলবিএম):
চীনের নিজস্ব ‘জিন’ প্রজাতির ডুবোজাহাজে মোতায়েন করা মারণাস্ত্রগুলোর মধ্যে জিএল-২ ব্যালিস্টিক মিসাইল সবার চেয়ে এগিয়ে। এ মুহূর্তে এ ধরনের চারটি সাবমেরিন আছে বেইজিংইয়ের হাতে। আরও দুটি নির্মাণাধীন। প্রত্যেকটি জিন সাবমেরিন ১২টি করে জিএল-২ মিসাইল বহনে সক্ষম। এ মিসাইল ৭ হাজার দুইশত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারে। চীনের উপক‚ল থেকে শুরু করে ভারত ও আমেরিকার আলাস্কা এর সীমার মধ্যে পড়ে। এর চেয়েও দূরপাল্লার জিএল-২ তৈরিতে কাজ করছে বেইজিং।
ডিএল-১৭ (এইচজিভি):
ডিএল-১৭ হলো শব্দের চেয়েও কয়েকগুণ দ্রুতগতিসম্পন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হাইপারসোনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল (এইচজিভি)। এটিকে মিসাইল রকেটের সাহায্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। কাক্সিক্ষত উচ্চতায় পৌঁছাবার পর এটি রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিস্ফোরক নিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে।
এইচজিভি ধীর ও দ্রুত উভয়গতিতেই শব্দের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি গতিতে শত্রুরাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এড়িয়ে ছুটতে পারে। ডিএফ-১৭ প্রজাতির এইচজিভি একইসঙ্গে পারমাণবিক ও নিয়মিত টর্পেডো বহনে সক্ষম হবে। আমেরিকাও বর্তমানে চীন ও রাশিয়ার পথ অনুসরণ করে হাইপারসোনিক প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
এইচ-৬এন বোমারু :
অনেক বছর ধরেই এইচ-৬ প্রজাতির দূরপাল্লার বোমারু বিমানের অধিকারী চীন। কিন্তু আসন্ন কুচকাওয়াজের দিন এ প্রজাতির আরও উন্নত মডেল প্রদর্শন করা হবে বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে অনুসারে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন এ বোমারু বিমান দিয়ে ডিএফ-২১ মডেলের জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে মারা সম্ভব। ডিএফ-২১ বিশাল আকৃতির বিমানবাহী রণতরীও ধ্বংস করতে সক্ষম।
ডিআর-৮ ড্রোন:
সুপারসনিক প্রযুক্তির গুপ্তচর ড্রোন ডিআর-৮ হলো আসন্ন কুচকাওয়াজের আরেক প্রধান আকর্ষণ। এটিও শব্দের চেয়ে ৫ গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে। যুদ্ধাবস্থায় দ্রুত শত্রুজাহাজ, বিমান ও অন্য স্থাপনার নিকটবর্তী হয়ে তাৎক্ষণিক তথ্য পাচারের কাজে এটিকে ব্যবহার করা হবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আক্রমণের ধরণ ঠিক করবে মিসাইল উৎক্ষেপণ যন্ত্র।
শার্প সোর্ড ড্রোন:
শার্প সোর্ড হলো নতুন প্রজাতির বাদুড় আকৃতির গুপ্তচর ড্রোন। যুদ্ধজাহাজে ব্যবহারের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। এ ড্রোনে বোমা রাখার দুটি পকেট আছে। দরকারি সময়ে তা ছুঁড়ে দেওয়া যাবে। উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও আগামীর ড্রোন যুদ্ধের জন্য এটি বানানো হয়ে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ড্রোন সাবমেরিন:
সমুদ্রের নিচে ব্যবহারের জন্য এটিই সম্ভবত চীনের প্রথম ড্রোন। প্যারেড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ ড্রোনের ছবি পাওয়া গেছে। এটিকে ‘রহস্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম। কী কাজে এ ড্রোন ব্যবহার করা হতে পারে তা অজানা। তবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ডুবোড্রোন তৈরিতে চীন প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করছে বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়। এজন্য বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১৫টি দল কাজ করছে।
৯৯ মডেলের মরুরঙের ট্যাঙ্ক:
গত ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজের মহড়ার ছবিতে ৯৯ মডেলের ভারী যুদ্ধট্যাঙ্ক ও ১৫ মডেলের হালকা ট্যাঙ্ক দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ০৪ মডেলের পদাতিক যুদ্ধযান (আইএফভি), মেরিন সেনাদের জন্য ০৫ মডেলের উভচর আইএফভিও দেখা যায়। এসব ট্যাঙ্ক আসন্ন কুচকাওয়াজে অংশ নেবে। এছাড়া এদিনই প্রথমবারের মতো সবার সামনে ১৫ মডেলের নতুন একটি প্রজাতির ট্যাঙ্ক উন্মোচন করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, জংলি রঙের ৯৯ মডেলের ট্যাঙ্কের আরও একটি নতুন ভার্সন তৈরি করেছে চীন। কিন্তু এটি মরুরঙের। এদিন এ ট্যাঙ্কও প্রদর্শন করা হবে। কিন্তু ঠিক কী কারণে মরুভ‚মির ছদ্মবেশে নতুন এ ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে তা জানা যায়নি।