অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন আসবে : সিটি মেয়র

64

বহুল প্রতিক্ষিত আরকান সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। বুধবার দুপুরে আরকান সড়ক ওসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরী চত্বরে এই সড়কের উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দীন খান বাদল বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সিটি মেয়র বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন আসবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পরতে বাধ্য। বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে অনুকরণীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে এই সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বর্তমানে এই নগরে ৭০ লক্ষ লোক বসবাস করে থাকে। ৬০ বর্গমাইলের শহরের এত লোকের ধারণ ক্ষমতা নেই। অপরিকল্পিত নগরায়নে দেখা দিচ্ছে নিত্য নতুন সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে নগর সেবায় নিয়োজিত সেবা সংস্থাসমূহকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নে ৩২টি সেবা সংস্থার কাজের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা, তার কুফল ভোগ করতে হয় সিটি করপোরেশনকে। প্রকল্প নেওয়ার সময় আমাদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। অথচ প্রকল্প নেয়ার আগে নগর উন্নয়নে যে কোনো প্রকল্প গ্রহণকালে চসিকের সাথে সমন্বয় করার সরকারি দিক নির্দেশনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একনেকে প্রকল্প পাস হয়ে যাওয়ার পর আমাদের মতামত চাইলে তখন আর কিছু করার থাকে না। দেশের মানুষকে উন্নয়নের কাজের কারণে সাময়িক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুধু বিরোধিতা না করে আমাদের কাজের সহযোগী হোন। চট্টগ্রাম নগরকে বাসযোগ্য ও বিশ্বমানের নগর গড়তে বর্তমান সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান নগর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ রোডের পথযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে প্রকল্পের কাজ চার মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার আরকান সড়কটিকে ১২টি লটে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চান্দগাঁওয়ে ৮টি এবং মোহরা ওয়ার্ডে ৪টি লট রয়েছে। এডিপির ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। বিআরটি ডিজাইনে নির্মিত হবে রাস্তাটি।
প্রকল্পের মধ্যে থাকছে রাস্তার উভয় পাশে প্রশস্ত ড্রেন ও দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত, ৬৪ ফুট প্রশস্ত রাস্তা, রাস্তা উঁচুকরণ, এসফল্ট মিশ্র কাপেটিং, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বাসের জন্য আলাদা লেইন এবং যাত্রী সাধারণের উঠানামা ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া আরো থাকছে ছয় লেইন বিশিষ্ট সড়কটির সৌন্দর্যকরণ, সবুজায়ন ও আধুনিকায়ন ও এলইডি লাইটের ব্যবস্থা।
মেয়র সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কোথাও কোনো ছেলেধরা নেই। কিছু গোষ্ঠী দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে গুজব ছড়িয়েছে। যার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি সবাইকে আরো ধৈর্যশীল ও সহনীয় হওয়ার আহবান জানান। মেয়র কালুরঘাট ব্রিজ যত দ্রæত সম্ভব নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহব্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দীন খান বাদল বলেন, এ সড়ক হওয়ার ফলে ২ থেকে ৫ লাখ লোকের উপকার হবে। তারা এতদিন মেয়র আর আমার বাপ-মা ধরে গালি দিতেন, তারা এইবার যেন দোয়া করেন। চট্টগ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরিকল্পিত ফ্লাইওভারের ফলে উপরে পানি, নিচেও পানি জমে যাচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা আমি কোথাও দেখিনি। তবে এ সড়কের উন্নয়ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত ঠিকাদারদের বাড়ি ঘর চিনে রাখার কথা বলেন তিনি। যদি কাজে গাফিলতি থাকে তাহলে তাদের বাসায় গিয়ে এর জবাব চাইবো। ২০১২ সালের পর চারবার কালুরঘাট সেতুটির জরিপ করা হলেও এর কোনো গতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। অবিলম্বে নতুন সেতু নির্মাণ করে নগরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ করার দাবিও জানান তিনি।
এ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু। অন্যান্যের মধ্যে চসিক প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান, কাউন্সিলর মোহাম্মদ আযম ও চসিক প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ ওমর ফারুক, কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খান, শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, সাবেক কমিশনার নুরুল ইসলাম, রাজনীতিক নোমান আল মাহমুদ, জাফর আলম, মোহাম্মদ ইসা এবং চসিক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম, আবু সালেহ, মনিরুল হুদা, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সিদ্দিক ও সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজবাহসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। পরে সিটি মেয়র ও সাংসদ বাদল বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজের ফলক উন্মোচন করেন। বিজ্ঞপ্তি