অপ্রতিরোধ্য ডেঙ্গু!

52

দিনের পর দিন বেড়েই চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গণমাধ্যমগুলোতে ডেঙ্গুর এ প্রকোপকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় এ রোগ এখন শুধু রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশেই এ রাতে ছড়িয়ে পড়ছে; প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে রোগীর ভারে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন সহ¯্রাধিক ডেঙ্গু রোগী।
কেন এই ভয়াবহ আকার ধারণ করল ডেঙ্গু ? সাধারণভাবে দায়ী করা হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে। তারা যথাসময়ে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তারা সেই পদক্ষেপ নেননি, বরং যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তা কার্যকরী নয়। বিষয়টিতে প্রশ্ন তুলেছেন উচ্চ আদালতও।
ওষুধ কার্যকরী কিনা, তা আগে কেন পরীক্ষা করা হয়নি, তা-ও জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত। আশ্চর্যই বলতে হবে, ডেঙ্গু যখন মহামারীর আকার ধারণ করতে যাচ্ছে, তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে ছেলেধরার মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তার এই বক্তব্য জনগণ মেনে নেয়নি। এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য বক্তব্য নয়। তবে বলা যায়, প্রচারে কিছু অতিরঞ্জিত হতেই পারে। কিন্তু এটি যে একেবারে গুজব-তা বলে মেয়র তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গুরোগ অবহেলা বা তামাশা করার মত বিষয় নয়। কারণ এরোগে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। ডেঙ্গুয় আক্রান্ত হয়ে একজন সিভিল সার্জনের মৃত্যুর খবর পত্রিকায় এসেছে।
অবশ্য সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকার দুই মেয়রকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্বীকার করে বলেছেন, ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ, ঘটছে প্রাণহানি। বস্তুত ডেঙ্গু দমনে শুধু দুই সিটি কর্পোরেশন নয়, দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার চরম গাফিলতি রয়েছে। কারণ আমরা লক্ষ্য করছি, রুটিন মেনে সকালে মশার লার্ভা নিধনে লার্বিসাইট এবং বিকালে উড়ন্ত মশা নিধনে এডাল্টি ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। উপরন্তু সিটি কর্পোরেশনগুলোর ক্রয়কৃত ওষুধগুলো অকার্যকর হিসেবে ধরা পড়েছে; এরপরও সেসব ওষুধ বাতিল না করে ছিটিয়ে যাচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষগুলো।
দ্বিতীয়ত, নগরবাসীকে আগাম সতর্ক করতে জনসচেতনতামূলক যে কর্মসূচি পালন করার দরকার ছিল, তা-ও করা হয়নি বা হচ্ছে না। তৃতীয়ত, ডেঙ্গুর বিষয়টি শুধু মেয়রদের দায়িত্বে পড়বে কেন? এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের কি কোন ভূমিকা নেই?
বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলে কী করণীয়? প্রথমত, বর্তমানে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে এডিস মশা নিস্তেজ হচ্ছে; কিন্তু মরছে না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এডিস মশা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এজন্য বর্তমানের ওষুধ ছিটাতে হলে এর ডোজ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনতিবিলম্বে কার্যকরী ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ব্যাপারে কোনো ধরনের গাফিলতি করা যাবে না। তৃতীয়ত, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের ওষুধের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না, প্রত্যেক নাগরিকের উচিত হবে স্ব স্ব বাড়িঘরের আশপাশে এডিসের প্রজনন হতে পারে এমন সব ব্রিডিং গ্রাউন্ডকে ধ্বংস করা। দিনের বেলায় অন্তত শিশুদের ঘুমের সময় মশারি ব্যবহার করাও সব অভিভাবকের দায়িত্ব। এবারের ডেঙ্গু অন্যান্য বারের চেয়ে আলাদা। এবার শুধু বাংলাদেশেই নয়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ রোগের ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবার ডেঙ্গুর সব লক্ষণ ধরা পড়ছে না। জ্বরও তেমন তীব্র নয়। ফলে অনেকে হয়তো বুঝতেই পারছেন না তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তৃতীয়ত, এবারের ডেঙ্গু হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি অঙ্গ অকার্যকর করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। সবদিক বিবেচনা করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধু সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভার দিকে থাকিয়ে না থেকে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা তথা দেশবাসীকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সচেতনতা সৃষ্টিসহ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।