‘অপহৃত’ সৌরভের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে কল

90

সোহেল তাজের ভাগ্নে ‘অপহৃত’ সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে কল আসার সূত্র ধরে তার সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, অপহরণকারীরা সৌরভকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারে। এ কারণেই সৌরভ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে কল দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ ফেসবুক লাইভে জানান, তার ভাগ্নে সৌরভের ফোন থেকে মঙ্গলবার (১৮ জুন) দিনগত রাতে কল এসেছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু কেউ কথা বলেনি। মঙ্গলবার রাত ২টা ২০ মিনিটে সৌরভের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তার বাবা ও মায়ের কাছে কল আসে। কিন্তু তারা ফোন ধরার পর কেউ কথা বলেনি।’
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি জানেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘অপরহণের দিন সৌরভ পাসপোর্ট নিয়ে বের হয়েছিল। তাই এটাও হতে পারে, সে দেশের বাইরে আছে। এ কারণে হয়তো তার মোবাইল ফোন বন্ধ। এ কারণে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কল করেছে। আবার এটাও হতে পারে, অপরহণকারীরা তাকে অপহরণ করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ কারণেই সৌরভ হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কল দিয়েছে।’ খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এ বিষয়ে জানতে সৌরভের বাবা মো. ইদ্রিস আলমের (মানিক) মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ফেসবুক লাইভে সৌরভের বাবা মানিক বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে (মঙ্গলবার) সৌরভের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তার নম্বরে কয়েক বার কল করা হয়। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী কল রিসিভ করেন। কিন্তু ওই প্রান্ত থেকে কোনও কথা বলেনি কেউ। এরপর বারবার কল করা হলেও ওই প্রান্ত থেকে কেউ কল রিসিভ করেনি। সকালেও সৌরভের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করা হয়েছে। তখনও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর খোলা ছিল।’ তবে সৌরভের মোবাইল নম্বর এখনও বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সৌরভের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে কল এসেছিল। এর সূত্র ধরে তারা সৌরভের সন্ধান বের করার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘রাত ২টা ১৮ মিনিটে সৌরভের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তার বাবাকে কল করা হয়। এটি আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে তার মোবাইল নম্বর এখনও বন্ধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে মোবাইল নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, সেটি বন্ধ থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে কলা করা যায়। এখনও আমরা নিশ্চিত নই, আদৌ কী সৌরভ কল করেছে নাকি তার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অন্য কেউ কল করেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাকে উদ্ধার করে যতক্ষণ না আপনাদের সামনে নিয়ে আসতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনও অগ্রগতি আছে বলে আমরা ভাবছি না। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাকে উদ্ধারে কাজ করছি।’ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি জানাতে রাজি হননি।
গত ৯ জুন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন আফমি প্লাজার সামনে থেকে সৌরভকে অপরহণ করে দুর্বৃত্তরা। সৌরভের পরিবার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন সুন্নিয়া মাদ্রাসা এলাকার বাসিন্দা। তাদের দাবি, সৌরভকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করানো হয়েছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে একটি কালো পাজারো গাড়িতে তাকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় পরদিন ১০ জুন পাঁচলাইশ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করেন সৌরভের বাবা। ঘটনার পর সৌরভের পরিবার আরও জানায়, আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ নামে এক ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে ওই পরিবারের লোকজন সৌরভকে অপরহণ করিয়েছে।
সৌরভের বাবা মানিক বলেন, ‘আবু সালেহ চৌধুরী আজাদের মেয়ের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক ছিল। এর জের ধরে কয়েক বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য হুমকি দেন। তার কাছ থেকে মুচলেকা নেন। ১০ রমজানও ঢাকার বনানীর বাসা থেকে সাদা পোশাকে ১০-১২ জন সৌরভকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা তাকে ছেড়েও দেয়। তাই আমাদের ধারণা, ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরেই সৌরভকে অপহরণ করিয়েছে মেয়েটির পরিবার। নিজের লোক দিয়ে হোক, অথবা অন্য কাউকে দিয়ে, না হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে হোক, সৌরভকে সালেহ আজাদই অপহরণ করিয়েছে।’