অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ রোধে কঠোর হচ্ছে সিডিএ

57

অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধে নগরীতে আর কোনো স্থাপনা যেন অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এলাকাভিত্তিক স্থাপনার অবস্থা পরিদর্শনে নামছে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে নগরীর কোতোয়ালী ও চকবাজার এলাকা পরিদর্শনে নামবে সিডিএ’র টিম। পরিদর্শনকালে আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ মিললে সাথে সাথে নেওয়া হবে ব্যবস্থাও।
ইতিমধ্যে নগরীতে গড়ে উঠা অননুমোদিত ভবন নির্মাণ ও অনুমোদনের বাইরে গিয়ে বর্ধিতাংশ নির্মাণসহ ভবন নির্মাণে অনিয়মকারীদের সতর্ক করে নোটিশ দিয়েছে সিডিএ। ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশ থাকলে সেগুলো সরিয়ে নিতেও বলা হয়।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, যে স্থাপনাগুলো হয়েছে, হয়ে গেছে। নতুনভাবে আর কোনো স্থাপনা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠুক চাই না। এলাকাভিত্তিক মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করা হবে। আমাদের টিম গিয়ে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম বা আইনের ব্যত্যয় পায় তাহলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবে। কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে।
জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক পরিদর্শনের জন্য একটি টিম গঠন করেছে সিডিএ। টিমে রাখা হয়েছে সিডিএ’র সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের। নেতৃত্বে থাকবেন সিডিএ’র মেট্রোপলিটন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী। বিচারিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের তত্বাবধানে পরিদর্শনকালে ভবন নির্মাণে কোনো অনিয়ম পেলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। কোতোয়ালী ও চকবাজার থানা এলাকায় আগামী বুধবার থেকে এ অভিযান পরিচালনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরে এলাকাভিত্তিক নিয়মিত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানে নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই অনুমোদনের বাইরে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করতে দিবে না সিডিএ।
সিডিএ’র অথরাইজেশন কর্মকর্তা-২ মোহাম্মদ শামীম বলেন, নতুন ভবনে অভিযান শুরু করা হবে। কোতোয়ালী ও চকবাজার থানা এলাকা থেকে এ অভিযান শুরু হবে। পরে অন্যান্য এলাকায় অভিযান পরিচালনা হবে। নতুন ভবন নির্মাণে আইন মানা হচ্ছে কিনা, স্যারেন্ডার ল্যান্ড ও সাইড ল্যান্ড আছে কিনা এসব দেখা হবে। অননুমোদিত আর কোনো ভবন হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অনুমোদন নেওয়া স্থাপনা নির্মাণে যথাযথ আইন মানা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখা হবে। যথাযথভাবে আইন মানা না হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে লোকসংখ্যা। এতে প্রতিবছর গড়ে যোগ হচ্ছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। তাদের জন্য প্রয়োজন ১০ হাজার ইউনিট অতিরিক্ত ফ্লাট কিংবা বসতঘর। নাগরিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পিত নগরায়ন জরুরি হলেও বাস্তবে তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গড়ে উঠছে বাড়িঘর ও হরেক ধরনের স্থাপনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম অপরিণামদর্শী মানব আগ্রাসনে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দ্রুতই পাল্টে যাচ্ছে প্রকৃতির নিটোলরূপে গড়া ভূ-প্রকৃতি। যথেচ্ছ বাড়িঘর ছাড়াও বিস্তার লাভ করছে দোকান-পাট, গুদাম, আড়ত, কল-কারখানা, বাণিজ্য ও বিপণীকেন্দ্র। বর্তমানে মানুষের অব্যাহত চাপ মোকাবিলায় নগরজীবন বিভিন্নমুখী ভোগান্তিতে বেসামাল। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ অবস্থার দিকে ধাবিত হবে এই নগরী।