অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে

37

সম্প্রতি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নৈতিক মুল্যবোধের যে চিত্র আমরা লক্ষ্য করছি-তাতে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানেই তো যেখানে আচরণগত পরিবর্তনের শিক্ষা দেয়া হয়। যে আচরণ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করবে। সভ্যতা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাবে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে মনে হয় আমাদের শিক্ষাটা উল্টো পিঠে হাঁটছে। নারায়নগঞ্জের এক স্কুল শিক্ষক কর্তৃক দীর্ঘকাল ধরে ভয়ভীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ধর্ষণ, এর আগে ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক ছাত্রীর শ্লীলতাহানী ও গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা যখন মানসিকভাবে অস্থিরতা বোধ করছিলাম, তখন ঘটল চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম (ইউসএসটিসি)-এ ইংরেজি বিভাগের প্রবীন এক শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অপষ্টোর ঘটনা। এ ঘটনা আমাদের বেশ সংক্ষুব্দ করেছে, বিচলিত করেছে। ঘটনাটি চট্টগ্রামসহ দেশে সর্বমহলে বেশ আলোচিত হচ্ছে। কারণ, এটি ঘটেছে দেশের প্রথম বেসরকারি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যার প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডা. নুরুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীর হাতে লাঞ্চিত ও অপদস্থ এ শিক্ষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারী এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপদেষ্টা শিক্ষক হিসাবে ইংরেজি বিভাগে কর্মরত। দৈনিক পূর্বদেশসহ সকল গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে আমরা জেনেছি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে। তাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই আরো যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের গ্রেফতার করে আইনর আওতায় আনা হবে। শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুনে পোড়ানোর অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করা হবে।
আমাদের ভাবতে অবাক লাগে ঘটনাটি কতটা নির্মম; একজন সিনিয়র অধ্যাপকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়েছিল, যদি শলাকার আগুন শরীরে দেওয়া হতো তাহলে ঘটনাস্থলেই বড় দূর্ঘটনা হয়ে যেত পারত।
বিষয়টা কী দাঁড়ালো; শিক্ষার্থীদের কাছে একজন শিক্ষক নিরাপদ নয়। সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মিত বেশ কয়েকজন শিক্ষক মাস দুয়েক আগে অভিযোগ করেছিল উক্ত শিক্ষক সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে যৌনতা বিষয়ে তুলে ধরে প্রকারান্তরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন। এ মর্মে তারা শিক্ষা উপমন্ত্রীর নিকট একটি স্মারকলিপি দেন যেখানে ইংরেজি বিভাগের ২৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২ জনের স্বাক্ষর ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই যৌন হয়রানির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে আসছিল।
কিন্তু এ হামলার পিছনে প্রকৃত কারণ হচ্ছে, ক্লাসে উপস্থিত না হওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অযোগ্যতা এবং বিভাগের চাকরিচ্যুত কিছু শিক্ষকের ইন্ধন। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত উপস্থিত না হলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি কোন শিক্ষক স্বাভাবিকভাবেই দিবেন না। সেখানে যারা অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে তারা মারাত্মক অপরাধ করেছে। এ অপরাধের নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি।
উন্নত বিশ্বে শিক্ষক লাঞ্ছনার এ ধরনের গর্হিত ঘটনা ঘটে থাকলে সাথে সাথে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদের যে কোন মূল্যে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হতো। অথচ, এখনো আমাদের দেশে এ বিষয়ে জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আমরা আশা করি, ঘটনা যে ঘটিয়েছে এবং যারা এর পেছনে ইন্ধনদাতা তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। একই সাথে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এ বেসরকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার পরিবেশ সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষ আরো মনোযোগি হবেন।