অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে

75

নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে যৌতুক, মাদক ও নারী নির্যাতনবিরোধী মহাসমাবেশ গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনজুমানে রজভীয়া নুরীয়া বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান পীরে তরিক্বত আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদক, শিশু নির্যাতনসহ সামাজিক নানা অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এসব সামাজিক অনাচার বন্ধে জনগণকে সচেতন হতে হবে। সামাজিক সচেতনতা ও গণঘৃণাবোধ জাগ্রত করা ছাড়া এসব সামাজিক অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। যৌতুকের গ্লানি থেকে গরিব পরিবারগুলোকে বাঁচাতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। যৌতুক দেয়া-নেয়া দুটোকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার একার পক্ষে সবকিছু সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে জনগণেরও অনেক করণীয় আছে। অথচ আমরা সে দায়িত্ব পালন করি না। সরকার সবকিছু করে দেবে এ মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন আল্লামা আবুল কাশেম নূরী গরিব মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ও দ্বীনি দায়িত্ববোধ থেকে আজ যৌতুক, মাদক ও নারী নিপীড়ন বিরোধী মহাসমাবেশ ডেকেছেন। তা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। তাঁর মতো আলেম, ইমাম, খতিব ও উলামা মাশায়েখগণ সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে দেশে অনুকূল পরিবর্তন আসবে।
মহাসমাবেশে বক্তারা দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানান। ভারত সরকারকে মুসলিম নিপীড়ন থামানোর দাবি জানান।
মহাসমাবেশের উদ্বোধক ছিলেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে তরিক্বত মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ আল হাসানী। তিনি বলেন, যৌতুক, মাদক, নারী নিপীড়ন থামাতে হলে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে। আলেম ও ইমাম সমাজ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হলে যাবতীয় সামাজিক অনাচার থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ জাহিদুল হাসান রুবায়েতের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আহব্বায়ক আলহাজ মুহাম্মদ নুরুল হক।
আলোচক নু.ক.ম আকবর হোসেন বলেন, যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় দেশে শত শত পরিবার ভাঙছে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতার আর্তনাদ থামাতে না পারা আমাদের বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার গ্লানি থেকে আমাদের নিষ্কৃতি খুঁজতে হবে।
ড. মাসুম চৌধুরী বলেন, যুব-তরুণরা আজ মাদকে আচ্ছন্ন। মাদক তাদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। ঘরে ঘরে আজ মাদক ঢুকে পড়েছে। মাদকের করাল গ্রাস থেকে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে। এই দায়িত্ব পালন না করলে আমাদের উত্তরসূরিরা আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না। বর্তমান প্রজন্মকে গভীর অন্ধকারের গহবর থেকে উদ্ধার করতে হলে আমাদের দায়িত্ব সচেতন হতে হবে, এর বিকল্প নাই।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা আবুল কাশেম নূরী বলেন, যৌতুক, মাদক ও নারীর প্রতি নিত্য অবমাননা আজ বড় সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা দেখে আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না। সামাজিক দায়বদ্ধতা, ঈমানি তাড়না ও মানবিক কর্তব্যবোধ থেকেই আমি এই আন্দোলন শুরু করেছি। সবাই আমার পাশে দাঁড়ালে আশানুরূপ সুফল মিলবে বলে আশা করি। মহাসমাবেশে সমবেত ছাত্র-যুব-জনতার প্রতি তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
মহাসমাবেশ শেষে মাদে মাগরিব থেকে শুরু হয় তফসিরুল কোরআন মাহফিল। আনজুমানে রজভীয়া নূরীয়া বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পীরে তরিক্বত আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন তরিকত ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান জাতীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
তিনি বলেন, কোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যার কারণে জঙ্গিবাদসহ নানা বিকৃত মতবাদ আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ইসলামের নামে বাতিল ফেরকাগুলোর দৌরাত্ম্য চলছে। হেফাজতি, ওহাবি ও মওদুদীবাদীদের দৌরাত্ম্য ও আস্ফালন থামাতে হকপন্থী দেশপ্রেমিক সুন্নি মতাদর্শী তরিকতপন্থী মানুষের জাগরণ অনিবার্য। বিভেদ অনৈক্য ভুলে তরিকতপন্থী সুন্নি জনতার ঐক্যের আহব্বান জানান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি।
মাহফিলের উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনেনীত মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে তফসির করেন আল্লামা ইউনুচ রজভী, আল্লামা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রিজভি।
সালাত সালাম শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ এবং দেশ ও বিশ্ববাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
এতে অতিথি ও আলোচক ছিলেন ড. নু ক ম আকবর হোসেন, ড. মাসুম চৌধুরী, রোটারিয়ান আলহাজ এসএম আজিজ, অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ দৌলতী, অধ্যাপক আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ইউনুচ রজভী, আলহাজ জহির আহমদ সওদাগর, আলহাজ মুসা সওদাগর, মুহাম্মদ আবুল হাসান, আবু ছালেহ আঙ্গুর, মুহাম্মদ মিঞা জুনাইদ, মুহাম্মদ তারেক আজিজ, মুহাম্মদ ফরিদুল আলম, মাওলানা ইয়াকুল আলী ফারুকী, মাওলানা আবু তৈয়ব মুহাম্মদ মুজিবুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাদের রজভী, মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী, এসএম ইকবাল বাহার চৌধুরী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন জালালী, মাওলানা আবুন নূর মুহাম্মদ হাস্সান নূরী, মুহাম্মদ আরাফাত, মুহাম্মদ এহসানুল করিম, মিনহাজ উদ্দীন সিদ্দিকী, মুহাম্মদ শাহীন সুজন, মুহাম্মদ রায়হান নূরী, মুহাম্মদ ছাফওয়ান নূরীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ। বিজ্ঞপ্তি