অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে গেলেন

39

প্রেম ও পরিণয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় একই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী কামরুল হাসানকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে মামলায় জড়িয়ে বাগে আনার ফন্দি এঁটেছিলেন শাহনাজ আক্তার। আরেক সহকর্মী সজীব দাশকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনামত সবকিছু সাজানো হয়। মামলাও করা হয় থানায়। কিন্তু তদন্তে নামার পর প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসে পুলিশের কাছে। অবশেষে শাহনাজ আর সজীব ঘটনার বিবরণ ও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। মিথ্যা মামলার অভিযোগে আদালতের নির্দেশে এখন তারা নিজেরাই মামলার আসমি হচ্ছেন।
পুলিশ জানায়, গত ১৪ ফেব্রূয়ারি কোতোয়ালি থানায় পোশাক কারখানার শ্রমিক কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন একই কারখানার কর্মী শাহনাজ আক্তার। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের প্রলোভনে ফেলে কামরুল ওই দিন তাকে নগরীর স্টেশন রোডের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে এসে ধর্ষণ করেন। পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য শাহনাজ পুলিশকে কামরুলের নামে একটি ফেসবুক আইডিও দেখান। ওই আইডি থেকে তাকে হোটেলে আসার জন্য মেসেজ বা বার্তাও পাঠানো হয়। দু’জনের মধ্যে সেখানে আরও কিছু বার্তাও আদান-প্রদান করা হয়। তবে মেসেজগুলো দেখে পুলিশের তখন সন্দেহ হলেও মামলা নিয়ে তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠায়। তারপর পুলিশ তদন্তে নামে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ধর্ষণের মামলাটি তদন্ত করতে নেমে আসামি কামরুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের অবস্থান দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, ঘটনার অনেক দিন আগে থেকেই তিনি শহরের বাইরে রয়েছেন। এমনকি মামলায় বর্ণিত ঘটনার দিনও তার অবস্থান ঘটনাস্থল বা আশপাশের এলাকায় পাওয়া যায়নি। পরে যে আবাসিক হোটেলে ধর্ষণ করার কথা বলা হয়েছে, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, মামলার বাদিনী ওইদিন সেখানে অন্য একজনের সঙ্গে এসেছেন। যার সঙ্গে এসেছেন তার সাথে কামরুলের চেহারার কোনও মিল নেই। তারপর বাদীনিকে ভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে নিজেই স্বীকার করেন, সহকর্মী কামরুলকে ফাঁসাতে তিনি আরেক সহকর্মী সজীব দাশকে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা সাজান। বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য পরিকল্পনামত মেসেজ আদান-প্রদানের বিষয়টি দেখানোর জন্য কামরুলের নামে নিজেরাই ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন। এরপর নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে সহযোগী সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, সহকর্মী শাহনাজের পরিকল্পনামতই তারা ওইদিন স্টেশন রোডের হোটেলে যান। সেখান থেকে তিনি বাসায় চলে যান। আর শাহনাজ মামলা করতে থানায় যান। জবানবন্দিতে শাহনাজ দাবি করেন, তার প্রেম ও পরিণয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রতিশোধ নিতে তিনি কামরুলের বিরুদ্ধে এ ঘটনা সাজান। মামলা করলে কামরুল বেকায়দায় পড়ে তার কব্জায় চলে আসবে বলে তিনি ধারণা করেছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইমরান বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় শাহনাজ ও সজীব সাজানো ঘটনায় মিথ্যা মামলা করার বিস্তারিত বিবরণ ও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে আদালত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার আদেশ দিয়েছেন। এখন ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে শাহনাজ আর সজীবের বিরুদ্ধে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে।