অনৈতিক পথে ভালো ফল পাওয়া যায় না

88

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হওয়া এবং পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া অবশ্যই জরুরি। কিন্তু এসব শিক্ষার একমাত্র বিষয় হতে পারে না। ভালো মানুষ হলাম কি না, আমার মধ্যে নৈতিকতা, মানবিকতা আছে কি না, আমি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছি কি না ? আমি সুস্থ, সুন্দর মন নিয়ে বড় হচ্ছি কি না, এসব আরও বেশি জরুরি।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতি আয়োজিত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি মানবিক কাজে মনোযোগ দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেমন দেশ গড়তে সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ দরকার। আর শুধুমাত্র জিপিএ-৫ পেলে বা ক্লাসে ভালো ফলাফল করলে সোনার মানুষ হওয়া যায় না। তার জন্য প্রয়োজন সুস্থ মানসিকতার মানুষ, যারা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস রাখবে আর উজ্জ্বীবিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকবে- এমন সোনার মানুষ আমরা গড়ে তুলতে চাই। সে জন্যই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গত এক দশকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান। এছাড়া চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে ডা. দীপু মনি বলেন, পরীক্ষার আগে আপনারা কোনো ধরনের অনৈতিক পথের খোঁজে নামবেন না। আমরা চাই, পরীক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পড়াশোনা করবে, ঠিকভাবে পরীক্ষায় অংশ নেবে এবং ভালো ফলাফল করবে। অনৈতিকতার পথে হেঁটে কখনো ভালো ফল পাওয়া যায় না।
আগামী ২ ফেব্রæয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ পরীক্ষা আমাদের জন্যও একটা পরীক্ষা। তা যেন সম্পূর্ণভাবে প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত, নকলমুক্ত হয়। এ লক্ষ্যে আমরা ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে চাই।
প্রশ্ন ফাঁসকারীদের মোকাবেলার ঘোষণা দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করবো কোনভাবেই যেন দুর্বৃত্তরা আমাদের সুন্দর প্রক্রিয়াকে নষ্ট করতে না পারে। কিন্তু প্রশ্নপত্র পাওয়ার ব্যাপারে অভিভাবক এবং পরীক্ষার্থীদের একাংশের যদি বিশাল আগ্রহ না থাকে, চেষ্টা না থাকে, তাহলে দুর্বৃত্তরা এ অপকর্ম করার চেষ্টা করবে না। সুতরাং করণীয় আছে আমাদের সকলেরই। সবাইকে মিলে এ প্রক্রিয়াকে সুন্দর, সফল এবং ত্রæটিমুক্ত করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যা কিছু ত্রæটি-বিচ্যুতি আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। তাই শুধু সরকার নয়; অভিভাবক, পরীক্ষার্থী এবং শিক্ষক সকলকে কাজ করতে হবে। সকল নাগরিকেরও দায়িত্ব আছে। সংবাদমাধ্যমেরও রয়েছে বিরাট ভূমিকা। আমরা শিশু-কিশোরদের জন্য একটি স্বপ্নের জগৎ তৈরি করে দিতে চাই। তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে, বিশ্বনাগরিক হবে। তারা বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও পড়াশোনার আহবান জানান। তিনি বলেন, তোমরা অবশ্যই পড়াশোনা করবে। পড়ালেখা করলে পাস-ফেল থাকবে, প্রথম-দ্বিতীয় থাকবে। চলো, আমরা ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও শিখি। আমাদের গুণীজনদের থেকে, ইতিহাস থেকে যেন শিখি।
পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলার তাগিদ দিয়ে নওফেল আরও বলেন, আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, আমাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে দেওয়া হয়নি। আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে দেওয়া হয়নি। তোমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন। তিনি দেশ পরিচালনা করছেন বলেই তোমরা স্বাধীনতার সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারছ। জাতির জনক সম্পর্কে জানতে পারছ। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারছ। তোমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের ইতিহাস, স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে হবে। জাতির জনক সম্পর্কে জানতে হবে।
প্রতিযোগিতায় অ্যাথলেটিক্স, হকি, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যাটমিন্টন ও টেবিল টেনিসসহ মোট ৩৫টি ইভেন্টে মোট ৮৬৪ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিচ্ছে।
গত ২ জানুয়ারি সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একযোগে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল, অঞ্চল পর্যায়ে অংশ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগীরা এখন জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে।
জাতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ‘বকুল অঞ্চল’, বরিশাল, খুলনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘গোলাপ অঞ্চল’, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘পদ্ম অঞ্চল’ এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘চাঁপা অঞ্চলের’ হয়ে অংশ নিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রশিক্ষণ মাঠে ভলিবল, জিমনেসিয়ামে ব্যাডমিন্টন, সেন্ট প্লাসিডস হাইস্কুল মাঠে বাস্কেটবল, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।