অনুমোদনহীন স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ নগরজীবন

131

নগরীতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে আট স্তরে অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে স্থাপনা। এতে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে নগরীর জীবনযাত্রাও। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর চট্টগ্রামের অগ্নিঝুঁকি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করা হচ্ছে। অবৈধ ও অনুমোদনবিহীন ভবন নিয়ে এবার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সিডিএ।
ভবন বা স্থাপনা নির্মাণে সিডিএ থেকে অনুমোদন নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নকশা অনুমোদন থেকে ভবন ব্যবহারের ছাড়পত্র পর্যন্ত মোট ৮টি স্তরে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও নকশা অনুমোদনের পর আর কোন স্তরের কথাই জানেন না সিডিএ। এরই মধ্যে অনুমোদনের বাইরে নিজের ইচ্ছেমত ভবন নির্মাণ করছেন অধিকাংশ লোকজন। নিয়ম অমান্য করে গড়ে তোলা এসব ভবন দিনদিন ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। একে তো নিয়মের মধ্যে থাকা জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে না, তার ওপর আবার অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা বা পাশের জায়গাও দখলে নিচ্ছে।
এতে অগ্নিকান্ডের মতো বড় দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যাওয়ার সুযোগ পর্যন্ত থাকছে না। সিডিএও এসব স্থাপনার অনুমোদন দেওয়ার পর ধাপে ধাপে তদারকি কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করে না। এ সুযোগে অসাধু ভবন মালিকরা অবৈধভাবে অনুমোদনের বাইরে গিয়ে স্থাপনার কাজ করে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ করে। এবার অমোদনবিহীন ও অনুমোদনের বাইরে থাকা স্থাপনা বিষয়ে কঠোর প্রদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সিডিএ।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, বনানীর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। চট্টগ্রামেও অনেক অবৈধ ও অনুমোদনবিহীন ভবন বা স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনার বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি। সংখ্যায় অবৈধ স্থাপনার পরিমাণ বেশি। তাই আমাদের একটু সময় লাগবে। যেগুলোর অনুমোদন নেই সেগুলো ভাঙা হবে। অনুমোদন নিয়ে যেগুলো বর্ধিত করা হয়েছে সেগুলোর বর্ধিত অংশ ভাঙা হবে।
তিনি বলেন, অনুমোদনবিহীন ও অনুমোদন নিয়ে বর্ধিত আকারে করা স্থাপনায় আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিলাম। অনেকগুলো ভবন উচ্ছেদ করা হয়েছিল, আবার অনেকগুলো অনুমোদিত ভবনের বর্ধিত অংশ ভাঙা হয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় সে অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমাদের মাজিস্ট্রেট আছে, আবার জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধলক্ষ ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। নকশা অনুমোদন নেওয়া এসব ভবনের নির্মাণ শেষ হলে সিডিএ থেকে ব্যবহার সনদ নেওয়া কথা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন ভবনের মালিক ব্যবহার সনদ নেননি। ব্যবহার সনদ পাওয়ার আগ পর্যন্ত ভবনের মালিক ভবন ব্যবহার করতে পারার কথা নয়। আর সবকিছু যথানিয়মে হলেই কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষ ব্যবহার সনদ দেওয়ার কথা। ভবন নির্মাণে অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করায় ভবন মালিকরা ব্যবহার সনদ নেন না। আর এ সনদ না নিলে ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী নকশা বাতিল ও ভবন উচ্ছেদের নিয়ম রয়েছে। সিডিএও এ পর্যন্ত এমন কোন ভবন উচ্ছেদ করেনি।
কথা হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, সিডিএর নিয়ম অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নিয়মিত কাজের সাথে আমাদের অনেকগুলো প্রকল্পের কাছ চলমান আছে, সেগুলোর কাজও দেখতে হচ্ছে। এতে নিয়মিত কাজে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, তবে অথরাইজড সেকশনগুলো আরো আন্তরিক হওয়া দরকার। ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন তদারিক জোরদার করলে ভালো হয়। মামলা না থাকলে আমার করার কিছু থাকে না।
২০০৯ সালের জুনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) এক জরিপ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১ লাখ ৮০ হাজার ভবনের মধ্যে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন। অন্য এক গবেষণায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দেখিয়েছেন, ১ লাখ ৮২ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৬৮ হাজার ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী, ভবন নির্মাণের সময় আটটি স্তরে সিডিএর অনুমোদন নিতে হয়। এগুলো হলো, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, নির্মাণকাজ শুরু অবহিতকরণ ও কারিগরি ব্যক্তিদের সম্মতিপত্র, ভবনের ভিত্তিস্তম্ভ পর্যন্ত কাজ সম্পর্কে কারিগরি ব্যক্তিদের প্রতিবেদন, ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্তি অবহিতকরণপত্র, কারিগরি ব্যক্তিদের প্রত্যয়নপত্র, ব্যবহার সনদ ও পাঁচ বছর পর ব্যবহার সনদ নবায়ন।