অনার কিলিং : আফজাল কোহিস্তানি হত্যায় পাকিস্তানে ক্ষোভ

47

পাকিস্তানে অনার কিলিংয়ের ঘটনা দেশবাসীর নজরে আনার কাজে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা আফজাল কোহিস্তানিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। রাজনীতিক ও মানবাধিকারকর্মীরা এই হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাচ্ছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে।
বুধবার রাতে অ্যাবোটাবাদের একটি জনবহুল বাণিজ্যিক এলাকায় পাঁচটি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন আফজাল। ২০১১ সালের একটি বিয়ের ভিডিও পাকিস্তানবাসীর নজরে আনেন আফজাল। ২০১২ সালে ভিডিওটি প্রকাশ করে তিনি দাবি করেন ওই বিয়ের পাত্র-পাত্রীকে অনার কিলিংয়ের নামে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, ভিডিওতে নাচতে থাকা তার দুই ছোট ভাইয়ের জীবনও হুমকির মুখে। এরপরই মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনলে তদন্ত শুরু হয়। তবে তদন্তে ওই নারীকে অনার কিলিংয়ের নামে হত্যার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিহত নারীর পরিবারের তিন সদস্য দাবি করেন, ভিডিওতে থাকা নারী জীবিত। ঐতিহ্য ভেঙে অনার কিলিংয়ের বিষয়টি প্রকাশ করার পর রক্ষণশীল কোহিস্তানে তার পরিবার ও নিহত নারীর পরিবারের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালে ওই নারীর পরিবারের ছয় সদস্য আফজালের তিন বড় ভাইকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলা কোহিস্তানের জন্য চাঞ্চল্যকর হলেও ২০১৭ সালে হাই কোর্টে আসামিরা বেকসুর খালাস পায়। বিরোধের জের ধরে আফজালের বাড়িতে আগুনবোমা নিক্ষেপ ও গুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে তিনি থামেননি। বাড়ি বদলে ওই নারীর পরিণতির বিষয়ে পুলিশ ও আদালতের কাছে ধর্ণা দিতে থাকেন।
মনোযোগ আকর্ষণ করে সংবাদমাধ্যমের। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম নতুন করে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দেয়। এতে নিহত নারীর পরিবারের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। আফজাল হত্যায় শুক্রবার পুলিশ অন্তত দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। প্রাদেশিক তথ্যমন্ত্রী শওকত ইউসুফ জাই ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, এই নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। আফজালের হত্যাকান্ডটি পাকিস্তানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই এই অনার কিলিংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, প্রতি বছর পাকিস্তানে প্রায় এক হাজার নারী তাদের আত্মীয় দ্বারা অনার কিলিংয়ের শিকার হন। বাস্তব সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তবে এমন হত্যার শিকার পুরুষের সংখ্যা অনেক কম। বিরোধী দলীয় নেতা শেরি রহমান টুইটে লিখেছেন, আফজাল কোহিস্তানির হত্যার ঘটনা পার্লামেন্টে তুলে ধরা হবে।