অনলাইন শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হচ্ছে : তথ্যমন্ত্রী

42

অনলাইনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনলাইনকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কাজ চলছে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘সাংবাদিকতার নীতিমালা, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও তথ্য অধিকার আইন অবহিতকরণ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনলাইনগুলোর শিগগিরই নিবন্ধনের কাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে আমাদের সংস্থাগুলো কয়েকটি অনলাইন নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা কাজ করছি। যে কেউ একটা অনলাইন খুলে বসল, সে আর পাঁচজনকে কার্ড দিচ্ছে, এভাবে চলতে পারে না। অনলাইনকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার এবং সেটার কাজ শুরু হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকলেই জানি, প্রেস কাউন্সিলের সেভাবে কোনো ক্ষমতা নেই। কার্যকর ক্ষমতার জন্য তারা আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই সেটা মন্ত্রিসভায় তুলব।’
সংবাদপত্র-টেলিভিশনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আগের চেয়ে কমে গেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রাষ্ট্র-সমাজের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেওয়ার জন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দরকার।’
প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোকে এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে আইনজীবীদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা ছিল। কিন্তু আইনজীবী সমিতিগুলো এ ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বার-এট-ল শেষ করেছে, কিন্তু এডভোকেটশীপ পরীক্ষায় পাস করতে পারছে না। আইনজীবীদের সংগঠনে এ বিষয়গুলো কঠোরভাবে আছে, সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর ভেতর থেকেও এটা আসতে হবে। তখন রাষ্ট্র এবং সরকার সহযোগিতা করবে।
মন্ত্রী বলেন, যে ধরনের সমাজ ও রাষ্ট্র চাই তা গঠনে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে উন্নত জাতি গঠন সম্ভব না। বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নত জাতি গড়তে হবে। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন উন্নত রাষ্ট্র থেকে এগিয়ে। এ বন্ধন অটুট রাখতে হবে।
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কে সাংবাদিক আর কে সাংঘাতিক এটা আপনাদের ঠিক করতে হবে। সাংবাদিককে সাংঘাতিক বলা আর শুনতে চাই না। রাস্তাঘাটে যে কেউ সামনে এসে বলবে- আমি সাংবাদিক, এটা আর চাই না। থানা লেভেলে যারা কাজ করে তাদের তো মানুষ ভয় পায়। আমার নিজের স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়ে ৫০টা ছবি তুলল আর বলল ১০ হাজার টাকা দাও। এই পেশা অনাচারে ভরে গেছে। নিজেদের মর্যাদা রক্ষায় আপনারা নিজেরাই ঠিক করেন, কি ধরনের যোগ্যতা থাকলে তাকে সাংবাদিক বলা যাবে। আমরা শুধু আপনাদের সহযোগিতা দিয়ে যাব।’
প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘অনলাইন আইন খুবই জরুরি। এটা এখন চলছে লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্রের মতো। লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্র কিন্তু যে কারও দিকে তাক হতে পারে। একজন পেশাদার সম্পাদক যখন অনলাইনের দায়িত্বে থাকবে না, সেটাকে গণমাধ্যম বলা যায় না।
এ সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘সাংবাদিকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু এমন দলীয় আনুগত্য থেকে লেখা যাবে না, যাতে পত্রিকাকে লিফলেট মনে হয়। লিফলেট লেখা তো সাংবাদিকের কাজ না, সেটা তো লিখবে দলীয় কর্মীরা। তবে, সংকট আছে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও। রাজনৈতিক দলগুলো ভাবে- যে সাংবাদিক একেবারে অন্ধভাবে তার পক্ষে লিখবে না, সে তাদের নয়। কিন্তু সাংবাদিকতা তো কোনো মূর্খ মানুষের পেশা নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন- এই সাংবাদিকতা তো মরে গেছে বহু আগে। ’
প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘আগে আমাদের নিজেদের অভ্যন্তরে ঠিক হতে হবে। আমাদের মর্যাদা রক্ষায় প্রথমে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের পত্রিকায়, টেলিভিশনে এখন শিক্ষিতরা আসছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখেই কিন্তু চাকরি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনলাইনগুলোতে দেওয়া হচ্ছে না। এই জায়গাটা ঠিক করতে হবে। কারও ইচ্ছে হল, অনলাইন খুলে নিজেকে সম্পাদক-সাংবাদিক দাবি করবে, এটা চলতে পারে না।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এবং প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. শাহ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস।