অনলাইনে কিভাবে নিরাপদ থাকবেন তা সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে : সাফফাত

149

ধরুন, আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ফেসবুকে আপনার একটি আইডি আছে। সে আইডি খোলার সময় আপনাকে নিজের ই-মেইল আইডি বা মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হয়েছে। বর্তমান সময়ে ফেসবুক ছাড়া যেন অনেকের একটি মুহূর্তও চলে না। চলবে কিভাবে, ফেসবুক তো শুধু বিনোদনের মাধ্যম হয়ে থাকেনি, তথ্য জানা থেকে শুরু করে, খাবারের অর্ডার দেওয়া, গাড়িতে চড়া বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জায়গায়ও ঢুকে পড়েছে, এতে সেটা হয়ে উঠেছে অন্য অনেক কিছুর মতোই অপরিহার্য ব্যাপার।
প্রতিদিন সেখানে আপনার বন্ধুবান্ধব-পরিবারের সাথে তোলা ছবি, আপনার স্ট্যাটাস যুক্ত হয়ে স্মৃতির অংশ হয়ে যাচ্ছে। তাই, আপনার ফেসবুক আইডিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোনো একদিন হঠাৎ দেখলেন, ফেসবুকে আর আপনি লগ-ইন করতে বা প্রবেশ করতে পারছেন না! এ অবস্থায় আপনার তো টেনশনে ‘মরার দশা’।
পরে জানলেন আপনার আইডিটি হ্যাকারের কবলে পড়েছে, হ্যাকিং অর্থাৎ আরেকজন আপনার আইডিটি দখলে নিয়েছে। এখন সে হ্যাক করেই তো ক্ষান্ত হবে না, আপনার বিপদ বাড়িয়ে তুলবে। সে আইডি দিয়ে কোনো অপরাধ করে বসতে পারে, শুরুতে আপনি দায়ী হয়ে যাবেন তার জন্যে কিংবা সে আপনার কাছেই চাঁদা চেয়ে বসতে পারে।
এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হলে কেবল বুঝতে পারেন, অনলাইনে আপনার নিরাপত্তা কত গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে অর্থাৎ আপনার ফেসবুক আইডি, ই-মেইল কিংবা ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুরক্ষিত না হলে আপনার সারাজীবনের তথ্য বেহাত তো হবেই, বিপদের মুখেও পড়বেন।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সময়ে প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও অনলাইনে বন্দী হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো সামাজিক স্ট্যাটাস প্রকাশ হচ্ছে। এ অবস্থায় অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কিভাবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন? কি ধরনের উপায় বা পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার ফেসবুক আইডি কিংবা অন্যান্য তথ্য নিরাপদ থাকবে, হ্যাকারের কবলে পড়বে না তা জানার উপায় বাংলায় খুব একটা মিলে না।
এসব বিষয় অনুধাবন করেই প্রযুক্তিবিষয়ক লেখক সাফ্্ফাত আহম্মদ খান লিখেছেন ‘কম্পিউটার হ্যাকিং ও ফরেনসিক’ নামক গ্রন্থ। এই বইটিতে তিনি সহজ বাংলায় সাইবার সিকিউরিটি বা অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতের খুঁটিনাটি তথ্য তুলে ধরেছেন।
এবার অমর একুশে বইমেলায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে ‘সাইবার বার্তা’।
সাফ্্ফাত আহম্মদ খান তার বইটিতে ১৫টি অধ্যায়ের মাধ্যমে সাইবার সিকিউরিটির সাথে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গ্রাফও দিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে : সাইবার জগৎ কি, বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং আমাদের জীবনে সাইবার জগতের প্রভাব, সাইবার ক্রাইম কি, সাইবার ক্রাইমের প্রকারভেদ। হ্যাকার, হ্যাকারের প্রকারভেদ, ইথিক্যাল হ্যাকারের ভূমিকা, সাইবার ক্রাইম বনাম হ্যাকিং। হ্যাকিংয়ের বিভিন্ন কৌশল, কি লগার, ফিসিং, স্ফুফিং, হ্যাকিং হার্ডওয়্যার। হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম, পেনিস্ট্রেশন টেস্টিং কি, কালি লিনাক্স কি। ওয়াই-ফাই হ্যাকিং, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যান্ড্রয়েড হ্যাকিং। ম্যালওয়্যারের খুঁটিনাটি।
বইটির লেখক সাফ্্ফাত আহম্মদ খান বলেন, হ্যাকিং নিয়ে সবার কৌতূহলের শেষ নেই। হ্যাকিং ও সাইবার সিকিউরিটি একসূত্রে গাঁথা। হ্যাকিং থেকে বাঁচতে হলে আগে জানতে হবে হ্যাকার কিভাবে কাজ করে। বইটিতে হ্যাকিং শেখানো হয়নি শুধুমাত্র হ্যাকারের কৌশলগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে হ্যাকিং থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেন। বইটিতে সাইবার ফরেনসিক নিয়ে কাজ করারও ধারণা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি বইটি পড়লে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সবার মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।
তবে বইটি সম্পর্কে লেখকের সতর্কবাণী হলো, এই বইয়ের সব কনটেন্ট কেবলই শিক্ষণীয় ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। কেউ কোনো ক্ষতিকর কাজে জড়িত হলে অবশ্যই সেটা সাইবার সিকিউরিটি আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বইটির ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক, দৈনিক আজাদীয় অনলাইন নিউজ ইনচার্জ প্রবীর বড়ুয়া। তিনি ‘সাবধানের মার নেই’ শিরোনামে ওই ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন, বর্তমান যুগে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এতটায় বেড়ে গেছে যে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সবাইকে এ জগতে বিচরণ করতে হয় দিনের অনেকটা সময়। আর এ বিচরণটা যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে নিজের অজান্তেই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক সাইবার দুর্ঘটনা অর্থাৎ ওই ব্যবহারকারী কোনো হ্যাকারের কবলে পড়ে হারাতে পারেন ফেসবুক, ই-মেইল, কিংবা ওয়েবসাইট। সুতরাং সাবধান থাকতে হবে বিপদে পড়ার আগেই।