অতিতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ৪র্থ বার সাংসদ হলেন ফজলে করিম

56

চট্টগ্রাম-৬ রাউজানের আসনে মোট ৮৪টি ভোট কেন্দ্রের এবারের ভোটের ফলাফলও অতিতের সব রের্কডকে ভঙ্গ করেছে। এখানে ২ লাখ ৭০ হাজার ৭৬০ জন মোট ভোটার। এরমধ্যে মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী মোট ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির প্রার্থী জসিম উদ্দিন সিকদার (ধানের শীষ) পেয়েছেন ২ হাজার ২৪৪ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী আব্দুল আলী (হাতপাখা প্রতীক) পেয়েছেন ১ হাজার ৪০৯ ভোট। প্রতিদ্বন্দি দুই প্রার্থীই হারিয়েছে জামানত। এখানে মোট ভোট সংগ্রহ হয়েছে ৮৬.৮৫ শতাংশ। বিজয়ী ফজলে করিম চৌধুরী বর্তমান সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তিনি চট্টগাম উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি। ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবার হেরে গেলেও ২য় বার থেকে পর পর চারবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হলেন। এরমধ্যে এবারসহ তিনবার তিনি বিএনপি প্রার্থীকে হারিয়ে সাংসদ হন। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সাংসদ হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী সাংসদ নির্বাচনে নতুন মুখ হলেও ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ছিলেন বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। সর্ম্পকে তারা চাচাতো জেঠাতো ভাই। গহিরা গ্রামের ভোটার ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমএ ওহাব বলেন সাংসদ নির্বাচনে এবারের ফলাফল অতিতের সব গুলো নির্বাচনের রের্কডকে হার হার মানিয়েছে। এত ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার এ রের্কড এখানে আগে কখনো হয়নি। তিনি বলেন, ফজলে করিম দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে তিনি কাজ করে এ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তাকে এত বিপুল ভোটে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত করেছেন ভোটাররা। ভোটেরদিন গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার ৮৪টি কেন্দ্রে মধ্যে উরকিরচর, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পূর্ব গুজরা, পশ্চিম গুজরা, বিনাজুরী, পাহাড়তলী, পুর্ব গুরা, কদলপুর, রাউজান সদর, পৌর এলাকার ২৫টি কেন্দ্রে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বতর্স্পূতভাবে ভোটারেরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কোন কেন্দ্রে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে আটটায় উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সামমাহালদার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় চারটি সারিতে আলাদা আলাদাভাবে শত শত নারী পুরুষ ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়ে আছে। এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৩৬০ জন। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং র্কমর্কতা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে সকাল সাড়ে ১০টায় জানান মোট ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশ। এ কেন্দ্রের প্রবীণ ভোটার সামমাহালদার পাড়ার বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, তিনি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। কোন ঝামেলা হয়নি। বেলা ২টার দিকে পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের অলিমিয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এম্বুলেন্স থেকে নেমে হুইল চেয়ারে বসে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধা নারী। নাম জিন্নাতুর বেগম। বয়স ৭০। তিনি বাধ্যক্ষজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সার্জিস্কোপ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাকে তার ছেলে ও ছেলের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। এসময় কেন্দ্র পরির্দশনে আসা মহাজোট মনোনিত প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এ বৃদ্ধা নারীর সঙ্গে কথা বলেন। ভোট দিতে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চান। বেলা ৩টার দিকে বাগোয়ান ইউনিয়নের গশ্চি বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং র্কমর্কতা মুহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে ভোটারের সংখ্যা ২১০২ জন। এরমধ্যে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। এ কেন্দ্রের ভোটার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজম রাশেদ বলেন, খুব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট কার্যক্রম হয়েছে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। যে যার মত করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন। তিনি তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেফায়াত উল্লাহ জানান, কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কার্যক্রম সমম্পন্ন হয়। ২৩০ জন পুলিশ, সেনাবহিনীর ১০০ সদস্য, বিজিবি ১০০, ১ হাজার ৮ জন আনসার, গ্রাম পুলিশের ৯৬ জন সদস আইন শৃঙ্খংলা নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজ করেন। তিনি বলেন, কোন ভোটার কোন অভিযোগ করেননি। সবাই যে যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন। তিনি গত রবিবার রাত পৌনে নয়টায় রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিম হোসেন জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সব কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। সব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে। তিনি জানান, ৬৪টি ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতিকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির প্রার্থী জসিম উদ্দিন সিকদার (ধানের শীষ) পেয়েছেন ২ হাজার ২৪৪ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী আব্দুল আলী (হাতপাখা প্রতীক) পেয়েছেন ১ হাজার ৪০৯ ভোট।