শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী। ১৯১৪ সালের ১৫ এপ্রিল কুমিল্লা শহরে তাঁর জন্ম। ১৯৩০ সালে তিনি কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই.এ (১৯৩২) ও বি.এ (১৯৩৪) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ (১৯৩৯) পাস করেন। পরে তিনি বিটি পরীক্ষায়ও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।
১৯৪২ সালে ঢাকা প্রিয়নাথ হাইস্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে অজিতকুমার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে জগন্নাথ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হয়ে তিনি ১৯৬৮ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৭-৫৮ সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। জগন্নাথ কলেজ ছেড়ে তিনি এক সময় ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।
অজিতকুমার ১৯৪০-৪২ পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে ছিলেন। সে সময় তিনি রবীন্দ্রসাহিত্যে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে রচিত প্রবন্ধসমূহে তাঁর প্রজ্ঞা ও মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা, সোনার তরী ও গীতাঞ্জলি এবং কালিদাসের মেঘদূত সম্পাদনা করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। এ ছাড়াও সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেন।
অজিতকুমার রাজনীতি না করেও সংস্কৃতিচর্চার কারণে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড?ে দুবার কারাভোগ করেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের দায়ে ১৯৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রেফতার হন। প্রায় দেড? বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে তিনি ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ৯২-ক ধারায় পুনরায় গ্রেফতার হন এবং প্রায় এক বছর কারাভোগ করেন।
অজিতকুমার ছিলেন একজন মুক্তচিন্তার মানুষ। এদেশের অসা¤প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার ধারা নির্মাণে তাঁর অবদান ও সাফল্য অপরিসীম। রবীন্দ্রসাহিত্যের খ্যাতনামা অধ্যাপক এবং সুবক্তা হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যসভায় শ্রুতিমধুর বক্তৃতা দিয়ে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালের ১২ নভেম্বর কুমিল্লায় তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র : বাংলাপিডিয়া