অগ্নিকান্ড এড়াতে সচেতনতা জরুরি

353

শীতঋতুতে প্রকৃতির মধ্যে একটা শুষ্কভাব বিরাজ করে। শুষ্ক মৌসুমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। প্রকৃতির মধ্যে শুষ্কভাবের কারণে সামান্য অসতর্কতার জন্য ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। বর্তমানে মাঘ মাস চলছে। গাছের পাতা ঝরে যাচ্ছে। দিয়াশলাইর কাঠি না নিভিয়ে এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেললে আগুন ধরে যায়। দেশের বিদ্যুৎ তার ও তার ব্যবস্থাপনায় ত্রæটি থাকলে বৈদ্যুতিক সটসার্কিট থেকেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। গ্যাসের চুলা, জ্বালানি কাঠের চুলা থেকেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সামান্য সিগারেটের শেষাংশ না নিভিয়ে যেখানে সেখানে ছুঁড়ে ফেললেও তার থেকে আগুন ধরে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। অগ্নিকান্ড এড়াতে জনসচেতনতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। আমরা পত্রিকার পাতা খুললেই দেখি এখানে সেখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানাধীন এ.কে খান মোড়ে ভিক্টোরিয়া জুটমিলের ভাড়া দেয়া জায়গায় কেমিক্যাল ও তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে। বিকাল ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হলেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ১০টা পর্যন্ত, পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অগ্নিকান্ড সংঘটিত হবার পর ফায়ার সার্ভিস এসে অগ্নি নেভানোর ব্যবস্থা করতে করতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে যে পরিমাণ পানি মজুদ থাকে তা শেষ হয়ে গেলে আশেপাশে পুকুর জলাশয় না থাকলে অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় পানি সংগ্রহ করতে করতে আগুনে ভষ্ম হয়ে যায় আক্রান্ত স্থান বা স্থাপনা।
এক সময় নগরীর বিভিন্ন স্থানে দিঘি, পুকুর, জলাশয় ছিল। অতিনগরায়নের ফলে দিঘি, পুকুর, জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। সামান্য বস্তি এলাকায় আগুন ধরলে আশেপাশের মানুষের পক্ষে আগুন নেভানো সম্ভব হয়ে ওঠে না পানির অভাবে। অনেক ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের জায়গাও থাকে কোন না কোন স্থানে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীর মানুষ শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকির মধ্যেই থাকছে।
অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণের প্রধান পন্থা হলো জনসচেতনতা। আমরা যে যেখানে আছি, জীবনযাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করলে অগ্নিকান্ডের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পাতে পারি। গ্যাসের চুলা রান্নার পর বন্ধ করতে হবে রান্নাকারীর নিজ দায়িত্বে। জ্বালানি কাঠের চুলা ভালো করে পানি দিয়ে নিভাতে হবে রান্না শেষ হলে। ধুমপায়ীদের ধুমপানের পর তার শেষাংশ ভালোভাবে নিভিয়ে দিয়ে নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ বর্তনী মেরামত করে স্বাভাবিক রাখতে হবে দায়িত্বশীলতার সাথে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রাখতে হবে নিরাপত্তার স্বার্থে।
ভিক্টোরিয়া জুটমিলে কেমিক্যাল ও তুলার গুদামে যে ভয়াবহ আগুনে পাঁচ ঘণ্টা ধরে সবকিছু জ্বলে-পুড়ে ভষ্ম হয়ে গেলো।
এর ফলে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা অগ্নি নেভানোর পর তো ফিরে পাওয়া যাবে না। এ অপূর্ণনীয় ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের সকল জনগণকে মাঘ, বৈশাখ মাস পর্যন্ত এই শুষ্ক মৌসুমে খুবই সতর্কতার সাথে অগ্নির ব্যবহার করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে জনসচেতনতাই পারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড থেকে আমাদের রক্ষা করতে।