অক্ষির পাপ

107

বালিময় দ্বার ধরে
জানলা থেকে চাঁদ অব্ধি
পলক ফেলে – গহবরে ডুকে পড়ে নজর।

এক মুঠো সুখ পেতে
সাক্ষী হল অক্ষির পাপ
তাতে কি আসে যায়?

কালো আলকাতরা ও নিকোটিন খেয়ে
পাশ ফিরে যে স্পর্শ সুখ জাগায়
ওষ্ঠ ও দুষ্ট দু’টোতেই
মিলে দই মাখা খই…

আকাশ ও পাতালের মাঝখানে
অপার মুগ্ধতায়
উলটেপালটে পাক খায়
শিরদাঁড়া মেরুদন্ডের ভুমিক্ষয়।

অজস্র ভাস্কর্য হয়ে যাচ্ছি

বজলুর রশীদ

চলে গেছে পাঁজর ভাঙার সময়-
তোমার আমার সমুদয় ব্যথা দিয়ে
আমরা বোবা হয়ে যাচ্ছি
ডাকতে আসবে না কেউ আমাদের
মিছিলে সকল প্রতিবাদ…!

তোমার আমার এইটুকুও প্রতিবাদ হবে না-
‘‘যুদ্ধ সভ্যতার সবচেয়ে বড় অপরাধ’’।
কিনে নিচ্ছে মৌন কিন্তু শব্দকাতর কিছু
পাথরের ভেতর রুপালি অন্ধকার;
গুণে নিচ্ছে স্থবিরতার বয়ান
ক্রমাগত অজস্র ভাস্কর্য হয়ে যাচ্ছি…!

মৃত্যু ৩
নূরনবী সোহাগ

মৃত্যু, শৈল্পিক ধ্যানকাল
সমস্ত বিকেল শেষ হয়ে এসে
নিশ্চুপতাকে ছোঁয় সন্ধ্যা সেজে
কোথাও কেমন করে ওঠা মুখ
ক‚ন্যতায় গাঢ়
আয়নারও নিজস্ব শোক থাকে
একলা ঘরে দেয়াল ধরে কাঁদে

গোলাপক্ষেতের প্রিয় গন্ধ, রৌদ্রের কফিন
সারি সারি গোলাপের কোরাস
মৃত্যু, শৈল্পিক ধ্যানকাল
অসম্পূর্ণ জীবনের বিকেল

নদী-বন্দনা
হাসান নাজমুল

তোমার এখানে এলেই বিদীর্ণ হয়-
শশব্যস্তের দূষিত শহর,
তোমার মায়ায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়
আমার নদীর জমিন;
হে নদী, আমাকে আগলে রাখো
এই অনুপম বুকে;
তোমার পাশেই এক নির্দিষ্ট ভূখন্ড দাও,
দাও- এক নীরব কুটীর
এক স্বতন্ত্র জীবন-জীবিকা;
ভোরে উঠেই তোমার স্বচ্ছ জলে-
দেখবো আমার মুখ;
ভুলে যাবো বিত্তের ভূমিকা
বৈভবের কঠিন সময়,
এখানে এলেই নেমে আসে নরম বিকেল।

নিরু এখনো মরেনি
শিউলী মজুমদার

এক অনাকাক্সিক্ষত ভুলে,
অথবা নিয়তির নিষ্ঠুর অভিঘাতে দোষী হয়েছিলো নিরু,
সে দোষই হলো তার আজন্ম পাপ,
দিন যত বাড়ে, দোষের ভারে নুয়ে পড়ে সে বারংবার!

প্রতিনিয়তই নিজেকে ভাঙ্গে আর গড়ে
মনের সঙ্গে যুদ্ধবাঁধে দিনরাত
ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় বাহু দুইখান।

নিরুত্তাপ পাগলিনীর মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে
প্রত্যক্ষ করে আপন ধ্বংসলীলা!
কালবোশেখির ভয়াল আবর্তে চোখজুড়ে নামে বিপুল অন্ধকার

নিজেকে একটু একটু করে নিঃশেষ হতে দেখেÑ
বলতে পারো নিজেকে নিঃশেষ হওয়াটাও আজকাল ভীষণ উপভোগ্য
বিন্দু বিন্দু অশ্রুজল কাঠগড়ায় দাঁড়া করিয়ে দেয়,
বিচার হয়েছে বহুবার।
তল্লাসিও হয়েছে ঢের
তোমরা ভাবো- সে মরেনি!
বিশ্বাস করো, সে কিন্তু অনেক আগেই মারা গেছে
তোমাদের ইচ্ছেতেই কেবল লাশটাকে বয়ে বেড়ায় প্রতিমুহূর্তে

তোমাদের ভালো রাখবে বলে।
তোমাদের হাসিতে হাসে, কষ্টে পায় কষ্ট…
মাঝে মাঝে নিজের জন্যও হাসে, কাঁদে
তোমাদের করুণামিশ্রিত বোকা হৃদয় আন্দোলিত হয়,
পরম পাওয়ায় হেসে ওঠো।
তারপর আবার তল্লাসি আবার কাঠগড়া।

ভিতরের লাশটা যে ভীষণ ভারী,
হয়তো তোমাদের ভালোবাসে বলেই নিরুরা বেঁচে আছে
খাঁচায় বন্দি মৃতদেহ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বিশ^ময়,
নিরুরা যে সহজে মরে না!