অংশীদারিত্ব ‘স্থায়ী রূপ’ দিতে চায় ঢাকা-দিল্লি

63

ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এমন রূপ দিতে চাইছে যাতে তা কখনও উল্টো পথে না যায়। নয়া দিল্লিতে দুই দেশের যৌথ পরামর্শক কমিটির সভায় বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের অংশীদারিত্বকে ‘স্থায়ী’ রূপ দিতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ক রূপরেখা প্রণয়নে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
সভা শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দুই দেশের অংশীদারিত্বকে এমনভাবে সাজাতে চাইছেন যাতে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়। খবর বিডিনিউজের
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের পক্ষে এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। পরে তাদের উপস্থিতিতেই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
এগুলো হল- ক. বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে সমঝোতা স্মারক। খ. আয়ুর্বেদ, ইয়োগা, ইউনানি, সিদ্ধ ও হোমিওপ্যাথির মতো বিকল্প ওষুধ খাতে সহযোগিতা নিয়ে ভারতের আয়ুশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গ. দুর্নীতি দমন নিয়ে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
এর বাইরে মংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে হীরানন্দানী গ্রুপের সঙ্গে একটি সমঝোতা
স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় মোমেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুষমা স্বরাজ। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে নয়া দিল্লি যাওয়ারও প্রশংসা করেছেন তিনি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, তাকে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্ক এখন ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা, উন্নয়ন সহযোগিতাসহ অসংখ্য বিষয়ে বিস্তৃত বলে মন্তব্য এসেছে তাদের যৌথ বিবৃতিতে। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরে গৃহীত সিদ্ধান্ত, ২০১৭ সালের অক্টোবরে জেসিসির সর্বশেষ বৈঠকের সিদ্ধান্তসহ দুই দেশের সহযোগিতামূলক চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন তারা।
নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, নদীর পানি ভাগাভাগি, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, পরিবহন যোগাযোগ, সংস্কৃতি, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ-প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত ও বাংলাদেশ অতীতের যে কোনো সময়ের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
এখন স্যাটেলাইট, পরমাণু শক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্সের মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রেও ভারত-বাংলাদেশের সহযোগিতার বিস্তারে সাধুবাদ জানান তারা।
বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাস্তুচ্যুত এই মানুষ যাতে নিরাপদে, দ্রুত ও স্থায়ীভাবে স্বভূমিতে ফিরতে পারে সেজন্য ভারত সরকারের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তিন দিনের সফরে গত বুধবার রাতে নয়া দিল্লিতে পৌঁছান। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। আজ শনিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।