চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ বছরে ৩ জনের আত্মহত্যা

33

চবি প্রতিনিধি

দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন নিশ্চিত করতে ভর্তিযুদ্ধে নামতে হয় শিক্ষার্থীদের। প্রতিযোগিতা শেষে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হতে পারেন এখানে। মেধাবী এসব শিক্ষার্থীদের ঘিরেই নানা স্বপ্ন থাকে পরিবারের। অথচ এসব শিক্ষার্থীরা নানা হতাশায় ভুগে নিজের গলায় নিজেই ফাঁস দিয়ে বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। এতে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর পরিবারের।
২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত চবির মোট ১৬ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই তালিকায় শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অ্যান্ড্রু অলক দেওয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর দিদারুল আলম চৌধুরী এবং বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের মতো গুণী ব্যক্তিও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু ২০২১ সালেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। এছাড়া বছরটিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাপদ্ধতি ও পরিবেশ এমনিতেই শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অনুকূল নয়। করোনাকালীন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রকট হয়ে ওঠা পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো তাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিধ্বংসী প্রবণতার জন্ম দিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতার অভাবকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন, কোথাওবা জীবন-জীবিকার সংকট, চাওয়ার সঙ্গে না পাওয়ার দ্বন্দ্ব, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, রোগ-বালাইয়ের জের থেকে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই অনেক সময়ই মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। সেই চাপ থেকেই নিজেকে শেষ করে দিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আত্মহত্যা করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। ব্যক্তিবিশেষে ক্ষেত্রগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। নিজের স্বার্থে আঘাত লাগা, চাহিদার সঙ্গে প্রাপ্তির ব্যবধান, অসহায়ত্ব, কর্মহীনতা, নৈতিক মূল্যবোধ একেবারে ফুরিয়ে যাওয়া, অর্থসংকট ও চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে না নিতে পারাসহ বেশ কয়েকটি কারণে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বিশেষ করে করোনার ঘরবন্দি সময়ে মানসিক অস্থিরতা এর জন্য অন্যতম দায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময়ে যেভাবে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে গেছে তা সত্যিই শঙ্কিত করে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। পরিবারে জ্যেষ্ঠদের খেয়াল রাখতে হবে, তাঁদের ছেলে-মেয়ে কী করছে, কাদেও সঙ্গে মিশছে। না হলে যে কেউ ভুল পথে পা বাড়াতে পারে। কারণ আত্মহত্যা করার পেছনে পরিবার, সমাজ ও দেশেরও দায় রয়েছে। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে, তা নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা হওয়া দরকার।’
আত্মহত্যা ঠেকানোর জন্য পরিবার এবং সমাজকে প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে, তবে পরিবারকেও নিজেদের আচরণ এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।